মোহাম্মদ রুমি শরীফ, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, গোটা পর্যটন খাতের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রভাবে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেল-মোটেল সহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চরম লোকসানের মুখে পড়েছে। বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা। কয়েকমাস বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশে পুনরায় স্বাভাবিক হলেও নেই আগের মত দেশি-বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা। এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। বন্ধকালীন সময়ে এসব হোটেল-মোটেলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে হয়েছে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়িদের। এছাড়া চরম লোকসানের মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অনেকে পর্যটক নির্ভরশীল ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার চিন্তভাবনাও করছেন। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে এবার ব্যবসায় যে ধ্বস নামছে, তা কাটিয়ে ওঠতে অনেক সময় লাগবে। চলতি বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি এসেছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির রূপ নেওয়ায় সেই গতি থমকে গেছে। বর্তমানে হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউজ ও রিসোর্টে পর্যটকদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।কুয়াকাটার একাধিক হোটেল মোটেল মালিকরা জানান,করোনা ভাইরাসের কারনে পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ট্যুরিষ্ট গাইড, পর্যটন নির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটররা সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ট্যুরিষ্টদের উপর নির্ভরশীল হয়ে আয়ের মানুষ গুলো একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। এখনো তাদের সংসার চালানো নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে।সরেজমিনে কুয়াকাটার চরগঙ্গামতি, লাল কাঁকড়ার চর, ঝাউবন, মিশ্রিপাড়া বৈদ্যবিহার, ইকোপার্ক, রাখাইন তাঁতশিল্প পল্লী, মিষ্টি পানির কূপসহ দর্শনীয় স্পট গুলোতে দূরের কোন পর্যটক নেই। যারা আছে তারাও কাছাকাছি এলাকার। বেলাভূমিতে ফুচকা, চটপটি, বাদাম, চানাচুর বিক্রেতাদেরও বেচা বিক্রি কমে গেছে বলে জানিয়েছেন চটপটি বিক্রেতা আলাউদ্দিন।কুয়াকাটা ফটোগ্রাফার মো.তৈয়ব মিয়া বলেন, লকডাউনের সময় আমরা একেবাইে বেকার হয়ে পড়েছিলাম। এখানে অন্তত দুই শত ফটোগ্রাফার রয়েছেন। আগের মত পর্যটক না থাকায় তাদের আয়ও কমে গেছে বলে এই ফটোগ্রাফার জানান।কুয়াকাটা টুরিজম অ্যাসোশিয়েশনের (কুটুম) সিনিয়র সহসভাপতি হোসাইন আমির বলেন, কুয়াকাটার মাঝারি ব্যবসায়ীদেরও সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে চলতি বছরের শুরুতে পর্যটনে নতুন গতি ফিরতে শুরু করেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র বাড়ির রিসোর্ট এর পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিরন জানান, আগের মতে পর্যটক নেই। রুম বুকিং ও কমে গেছে। যা আছে তারা দূরে নায় কাছা কাছির এলাকার। তবে বিশেষ কোন দিন কিংবা শুক্রবার পর্যটকদেও চাপ বেশি থাকে। এছাড়া লকডাউনের সময় বিদ্যুৎ বিল,স্টাফ ও হোটেল মেন্টেন সহ প্রতিমাসে এক লাখ টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে।কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সাবেক সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোনে আনু বলেন,বর্তমানে কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারীদের ব্যাবসা বানিজ্য মন্দা যাচ্ছে। করোনা গোটা পর্যটন খাতের অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক হোটেল মোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে অন্তত এক হাজারের মতো কর্মচারী রয়েছে। তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণে আমাদের তথা মালিকপক্ষকেই দেখতে হচ্ছে, যা আমাদের পক্ষে কষ্টকর। বার্তামানে আমাদের খুবই খারাপ আবস্থা চলছে। তেমন কোন পর্যটক আসে না। পর্যটক না আসায় আমাদের হোটেল ব্যবসা মন্দ চলছে। মোহাম্মদ রুমী শরীফ,বিশেষ প্রতিনিধি