মিজানুর রহমান বুলেট (ডেস্ক রিপোর্ট)।। কলাপাড়া ভূমি অফিস এখন দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। ভুয়া বন্দবস্ত , এসএ খতিয়ান, দাগ, সহিমােহর পর্চা, বিএস ও ডিপি খতিয়ান সৃষ্টি করে সরকারের বিপুল পরিমান খাস জমি ব্যহার করে কােটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি কুচক্রী মহল। কিন্তু এ নিয়ে অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এই ভূয়া বন্দবস্তে চিংগড়িয়া, নাচনাপাড়া নদীসহ আন্ধারমানিক নদীর ডুবাচরও বাদ যায়নি। সর্বশেষ আশ্রয়ন -২ প্রকল্পের অত্মরালে ৭২ একর খাস জমি ৪২ বিত্তবানের নামে বন্দবস্ত কবুলিয়াতি রজিষ্ট্রার করা হয়, যার বর্তমান মূল্য আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিবারের মতোই এবারও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
জানা যায়, ইলিশ’র অভয়াশ্রম ও প্রজনন স্থল খ্যাত কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদীর সোনাতলা মৌজার এসএ ২ নং সিটভূক্ত ডুবোচরের অন্তত: সাড়ে সাত একর জমি বিক্রী করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সরকারের নদী শ্রেনীর বিপুল পরিমান এ জমি স্থানীয় ভূমি অফিস ম্যানেজ করে ভুয়া বন্দোবস্ত কেস, এসএ খতিয়ান, দাগ, সহিমোহর পর্চা, নাম সংশোধন, বিএস ও ডিপি খতিয়ান সৃষ্টি করে চক্রটি। যার ৪৬ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর একত্রে নিয়ে খাজনা দাখিলা দেয় তহশিলদার এবং দু’টি সাব কবলা দলিল রেজিষ্ট্রীর করে সাব রেজিষ্ট্রার। অনুসন্ধানে জানা যায়, আন্ধারমানিক নদীর মধ্যে ডুবোচর ভূমি অফিসের যোগসাজশে ভুয়া সেটেলমেন্ট কেস ৪৪কে/৫২-৫৩ ও ৫০কে/৬৬-৬৭’র বিপরীতে সাড়ে সাত একর জমির বন্দোবস্ত কাগজ তৈরী করা হয় উপজেলার তুলাতলি গ্রামের মোন্তাজ উদ্দীন মৃধা’র কন্যা, মৃত উমর আলী খান’র স্ত্রী দুস্থ আম্বিয়া খাতুন’র নামে। যার তফসিল, কলাপাড়াধীন ২৩ নং সোনাতলা মৌজা, এসএ-৫৯১/১ নং খতিয়ান, বার্ষিক খাজনা মং ২৮/৫০ পয়সা, দাগ নং- ১৭৬/১১৮৬ ও ১১৮৭, মোট জমি ৭.৫০ একর, যা সোনাতলা মৌজার এসএ ২ নং সিটভূক্ত আন্ধারমানিক নদীর এসএ ১১৮৬/১১৮৭ দাগ। যার বিপরীতে সৃষ্টি করা হয় ৩৯২২ ও ৩৯২৩ বিএস দাগ।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কলাপাড়া সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসে খাস খতিয়ানের রেজিষ্ট্রারে এসএ ৫৯১/১ খতিয়ান ও ১৭৬/ ১১৮৬ ও ১১৮৭ দাগের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু সার্ভেয়ার শাখার বন্দোবস্ত কেস খতিয়ানের রেজিষ্ট্রারের মাঝ বরাবর সোনাতলা মৌজার শুরুতে সাদা কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে আম্বিয়া খাতুন’র নামে অবিকল এসএ ৫৯১/১ খতিয়ান ও ১৭৬/ ১১৮৬ ও ১১৮৭ দাগ’র অস্তিত্ব রয়েছে।
এছাড়া পটুয়াখালী কালেক্টরেট অফিসের রেকর্ড রুম শাখা’র দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মাহবুবুল ইসলাম’র স্বাক্ষর জাল করে ১১-১০-১৮ তারিখ লেখা সহিমোহর পর্চা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং দিয়ারা সেটেলমেন্ট অপারেশন, বরিশাল’র আপত্তি অফিসার মো: মনিরুল ইসলাম’র স্বাক্ষর জাল করে সৃষ্ট ২৫- ০৯-০৭ তারিখ লেখা বিএস হাত পর্চা সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর ১৩৭৯ থেকে ১৪২৫ পর্যন্ত ৪৬ বছরের ভূমি উন্নয়ন কর একত্রে নিয়ে আম্বিয়া খাতুন’র নামে খাজনা দাখিলা প্রদান করা হয়। যার প্রেক্ষিতে ২০৫২/১৯ ও ২০৫৩/১৯ পৃথক দু’টি সাব কবলা দলিল রেজিষ্ট্রীতে আন্ধারমানিক নদীর ডুবোচরের ওই সাড়ে সাত একর জমি মোটা অংকে ক্রয় করে নেন ওয়াই কে জেড কনষ্ট্রাকশন সলিউশন লি:, পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান আহমেদ।
অথচ ভূমি অফিসের ১নং রেজিষ্ট্রারে এসএ ৫৯১/১ খতিয়ান ও ১৭৬/ ১১৮৬ ও ১১৮৭ দাগের কোন অস্তিত্ব নেই। এদিকে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অন্তরালে কলাপাড়া ভূমি অফিস থেকে ৪২ বিত্তবানের নামে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ একর খাস জমির বন্দোবস্ত কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রীর ঘটনা গনমাধ্যমে প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কার্যক্রমের রিপোর্ট বের না হতেই ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বাদী হয়ে এ ঘটনায় কলাপাড়া ভূমি অফিসের কর্মরত সার্ভেয়ার মোঃ হুমায়ুন কবিরকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাতনামা আসামীদের নামে ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন। অথচ মোটা অংকের লেনদেনে তাঁর স্বাক্ষরেই সবগুলো বন্দোবস্ত কবুলিয়ত রেজিষ্ট্রী হয়েছে। যদিও তার দাবী তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। সাব রেজিষ্ট্রারের বক্তব্য, প্রতিটি বন্দোবস্ত কেসে ইউএনও’র সঠিক স্বাক্ষর ছিল। তবে ৭২ একর খাসজমি রেজিষ্ট্রী কান্ডে আর কে কে জড়িত? এমন প্রশ্ন এখন দেশের সাধারন মানুষের।
কলাপাড়া সহকারী পুলিশ সুপার ও তদন্ত কমিটির সদস্য মাে: আজাদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় প্রধান আসামী সার্ভেয়ার হুমায়ুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তদন্ত চলছে, অতি শিঘ্রই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবাে।
কলাপাড়া সহ কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবুবক্কর সিদ্দিকী বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে, প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টির ব্যাপারে সত্যতা জানা যাবে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মাে: কামাল হাসন বলেন, ৭২ একর খাস জমি বন্দবস্ত দেয়ার ঘটনায় এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দয়নি তদনাত কমিটি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আন্ধারমানিক ডুবাচর বন্দবস্ত সংক্রান্ত বিষয়টি তিঁনি দখবেন বলে জানান।