আরিফ সুমন (অনলাইন ডেস্ক)।।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অন্তরালে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৪২ বিত্তবানের নামে ২৫ কোটি টাকা মূল্যের ৭২ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়ার ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার মো: হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সহ ফৌজদারী মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের একজন নকল নবিস, একজন দলিল লেখককে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। ১২জন নকল নবিসকে অফিসিয়াল কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তদন্তে শেষে এ ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন সূত্র।
এর আগে এ বছরের ১৯ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল এবং ১৯ মে ৪২ বিত্তবানের নামে ৭২ একর খাস জমি আশ্রয়ন প্রকল্পের দুস্থদের দলিলের সাথে দলিল রেজিষ্ট্রী করে অভিযুক্তরা। যা থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এসব দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে বিত্তবানদের নামে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২ টি নামে এই পরিমান খাস জমি মুজিব শতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিষ্ট্রী করে দেয়া হয়েছে।
দলিল রেজিষ্ট্রীর পর নামজারি প্রক্রিয়ার সময় এ বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। এরপর অভিযুক্ত মাষ্টার মাইন্ডকে বাঁচাতে কোমর বেঁধে মাঠে নামে একটি মহল। যারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কিংবা তদন্ত ছাড়াই ওই বন্দোবস্ত কেস গুলোতে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল কিংবা স্কান করে বসানো হয়েছে মর্মে গনমাধ্যমকর্মীদের তথ্য সরবরাহ করেন। ক’জন বিএনপি পন্থী গনমাধ্যমকর্মীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন ইউএনও।
এতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কিংবা তদন্ত ছাড়াই ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে ৪২ বিত্তবানের নামে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির বন্দোবস্ত কেসের দলিল রেজিষ্ট্রী সম্পাদন করেছেন মর্মে ক’টি গনমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ পায়।
এদিকে খেপুপাড়া সাব রেজিষ্ট্রার রেহেনা পারভিন তাঁর বক্তব্যে দৃঢ়তার সাথে পুন:রায় বলেছেন ওই বন্দোবস্ত কেসগুলোতে ইউএনও’র স্বাক্ষর সঠিক ছিল। জাল বা স্ক্যান করে করা হয়নি বিধায় তিনি দলিলগুলো রেজিষ্ট্রী করেছেন। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে নকল নবিস মোসা: হাওয়া বেগম, দলিল লেখক মো: আনোয়ার হোসেনকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। ১২জন নকল নবিসকে অফিসিয়াল কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস পরিদর্শন করে সবকিছু জ্ঞাত হয়েছেন। জেলা রেজিষ্ট্রার মো: কামাল হোসেন বলেন,’বন্দোবস্ত দলিলে ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল কিংবা স্ক্যান করা হয়েছে, এটি সিআইডি’র এক্সপার্ট ওপিনিয়ন কিংবা তদন্ত কার্যক্রম শেষ ছাড়া বলা যাবে না। তদন্ত শেষে আপনারা সবকিছুই জানতে পারবেন।
তদন্ত কমিটি প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: ওবায়দুর রহমান বলেন, ’৭২ একর খাস জমি বন্দোবস্ত ঘটনার তদন্তে আমার সাথে জেলা রেজিষ্ট্রার ও পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্ত শেষে এর সাথে যদি আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আরও বলেন, ’ প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত সার্ভেয়ার মো: হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা সহ ফৌজদারী মামলা দায়েরের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া থানায় এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন কলাপাড়া থানার ওসি মো: জসিম। এছাড়া কলাপাড়া এসি ল্যান্ড মো: আবুবক্কর সিদ্দিকীর সরকারী মুঠো ফোন নম্বরে একাধিক বার সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় অভিযুক্ত সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের বিষয়ে কোন তথ্য জানা যায়নি।